সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:৫২ পূর্বাহ্ন
নুপা আলম : নির্বাচন কমিশনের কক্সবাজার পৌরসভার নির্বাচনের ঘোষণার পর থেকে কেন হচ্ছেন প্রার্থী এ নিয়ে পর্যটন শহরে চলছে তুমুল আলোচনা। ইতিমধ্যে সরকার দলীয় আওয়ামীলীগের মেয়র প্রার্থী হিসেবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সহ নানাভাবে ৪ জনের নাম আলোচনা হচ্ছে। তবে কক্সবাজার পৌরসভা আওয়ামীলীগের নেতারা শেষ ভরসা মনে করছেন বর্তমান মেয়র জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমানকে। নির্বাচন নিয়ে পুরোটাই নীরব ভ‚মিকায় রয়েছে বিএনপি। তারা নির্বাচনে অংশ নেয়ার কথা চিন্তা করছেন না। এ সুযোগে আবারও মাঠে মেনেছেন জামায়াত নেতা ও সাবেক পৌর মেয়র সরওয়ার কামাল।
কক্সবাজার পৌরসভার সর্বশেষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে ২০১৮ সালের ২৫ জুলাই। ওই নির্বাচনে মেয়র নির্বাচিত হন আওয়ামীলীগের প্রার্থী মুজিবুর রহমান। নির্বাচনে বিএনপির ধানের শীষ প্রতিক নিয়ে রফিকুল ইসলাম, জামায়াত সমর্থিত নাগরিক কমিটির সরওয়ার কামাল ও জাতীয় পার্টির রুহুল আমিন শিকদার মেয়র পদে প্রার্থী ছিলেন।
গত ৩ এপ্রিল নির্বাচন কমিশন কক্সবাজার পৌরসভার নির্বাচন আগামি ১২ জুন অনুষ্ঠিত হবে বলে ঘোষণা দেন। ঘোষণা মতে, কক্সবাজার পৌরসভার নির্বাচনের মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ সময় ১৬ মে, বাছাই ১৮ মে, প্রত্যাহারের শেষ সময় ২৫ মে।
কক্সবাজার জেলা নির্বাচন কার্যালয়ের তথ্য বলছে, কক্সবাজার পৌরসভার ১২ টি ওয়ার্ডের বর্তমান ভোটার সংখ্যা ৯৪ হাজার ৮০২ জন। যার মধ্যে পুরুষ ভোটার ৪৯ হাজার ৮৭৯ জন ও নারী ভোটার ৪৪ হাজার ৯২৩ জন। তবে এ ভোটার সংখ্যা কিছুটা বাড়তে পারে বলে জানিয়েছেন কক্সবাজার জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা শাহাদাত হোসেন।
নির্বাচনের ঘোষণার পর থেকে পর্যটন শহর কক্সবাজার পৌরসভার নির্বাচনের মেয়র প্রার্থী নিয়ে তুমুল আলোচনা চলছে। যে আলোচনায় ঘুরে-ফিরে কে হচ্ছেন আওয়ামীলীগের মেয়র প্রার্থী এ নিয়ে হয়ে উঠেছে কেন্দ্র বিন্দু। ইতিমধ্যে আওয়ামীলীগের মেয়র প্রার্থী হিসেবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সহ নানাভাবে ৪ জনের নাম আলোচনা এসেছেন। এরা নিজকে মনোয়ন প্রত্যাশী দাবি করেন, দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে যাওয়ার কোন সুযোগ নেই বলে মন্তব্য করেন।
আলোচনায় আসা আওয়ামীলীগের ৪ মেয়র প্রার্থী হলেন, বর্তমান মেয়র ও জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান, পৌরসভার প্যানেল মেয়র ও জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান, জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মাসেদুল হক রাশেদ, জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সদস্য রাশেদুল ইসলাম। কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত মতে প্রার্থী চ‚ড়ান্ত করতে আগ্রহীদের আগামি ৯ থেকে ১২ এপ্রিল মনোনয়ন পত্র সংগ্রহ করে জমা দেয়ার নিদের্শনা দেয়া হয়েছে।
বর্তমান মেয়র ও জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান জানান, নির্বাচিত হওয়ার পর কাজ করার সুযোগ পেয়েছেঠন মাত্র ২ বছর। বাকি সময় গুলো চলে গেছে করোনা কালিন মানবিক সেবায়। এর মধ্যে পর্যটক শহরের উন্নয়নের চেহারা বদলে গেছে। বদলে গেছে শহরের সড়ক-উপ সড়ক সহ সার্বিক দৃশ্য। উন্নয়ন কাজ এখনও চলমান। পৌরবাসি চান তিনি আবারও নির্বাচন করুক, দলীয় নেতা-কর্মীদের চাপও রয়েছে। ফলে মেয়র প্রার্থী হিসেবে আবারও মনোনয়ন চাইতে হচ্ছে। তিনি আশা করেন দল তাকে আবারও প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দেবেন।
পৌরসভার প্যানেল মেয়র ও জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান জানান, একাধিক বারের কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র তিনি। দায়িত্ব পালন করেছেন ভারপ্রাপ্ত মেয়র হিসেবেও। গতবারেও মনোনয়ন চেয়েছিলেন। এবারও চাইবেন। তবে দল যাকে মনোনয়ন দেবেন তার পক্ষেই অবস্থান সব সময় ছিল এবং থাকবে বলে জানান তিনি।
জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মাসেদুল হক রাশেদ জানান, তার পিতা মরহুম একেএম মোজাম্মেল হক জাতির জনকের অত্যন্ত কাছের মানুষ ছিলেন। আজীবন আওয়ামীলীগের হয়ে লড়াই-সংগ্রাম করে বেঁচে থাকা পরিবারের একজন তিনি। তিনি মেয়র পদে নির্বাচন করুক এটা নেতা-কর্মীদের দাবিও প্রত্যাশা। মনোনয়ন চাইবেন। তবে দল যে সিদ্ধান্ত দেবেন তা মেনে নেবেন বলে জানান তিনি।
জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সদস্য রাশেদুল ইসলাম জানান, কক্সবাজারের সার্বিক পরিস্থিতিতে পরিবর্তন প্রয়োজনীয় হয়ে উঠেছে। এর আগেও একাধিকবার নির্বাচনে মনোনয়ন প্রত্যাশা করেছিলেন। এবারও তিনি অবশ্যই মনোনয়ন চাইবেন। যার জন্য ঢাকায় যাওয়ার প্রস্তুতিও নিয়েছেন।
তিনি মনে করেন, একটি বলয় বা সিন্ডিকেট ভাঙ্গতে মেয়র পদে তাকে দল মনোনয়ন দেবেন। দলের সিদ্ধান্ত চ‚ড়ান্ত মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘দলের সিদ্ধান্তের বাইরে কাউকে যাওয়ার সুযোগ নেই।’
মনোনয়ন প্রত্যাশী অনেকেই থাকতে পারেন বলে মন্তব্য করে কক্সবাজার পৌর আওয়ামীলীগ ও তার আওতাধিন ১২ টি ওয়ার্ডের আওয়ামীলীগের নেতারা শেষ ভরসা রাখতে চান বর্তমান মেয়র মুজিবুর রহমানের উপর।
এর কারণ হিসেবে কক্সবাজার পৌর আওয়ামীলীগের সভাপতি মো. নজিবুল ইসলাম জানান, কক্সবাজার পৌরসভা হওয়ার পর থেকে যে উন্নয়ন কেউ কোনদিন চিন্তা করেননি মেয়র মুজিবের সময়ে তার হয়েছে। পর্যটন জোন কলাতলী সড়ক, লাবণী পয়েন্ট থেকে সুগন্ধা সংযোগ সড়ক, ২৯ টি সড়ক উপ সড়কের মধ্যে ২৫ টি সড়ক উপসড়ক পুরোটাই বদলে গেছে। যদিও সড়ক উপ সড়কের কাজে আরও কিছুই অসমাপ্ত রয়েছে। ওখানে ফুটপাতে টাইলস্ ও বাতি স্থাপনের কাজ বাকি আছে। এসব কাজ শেষ হলে কক্সবাজার থেকে দূরে থাকা কেউ ফিরে শহর চিনতে ভুল করবেন। এসব উন্নয়ন সম্ভব হয়েছে আওয়ামীলীগের সরকারের বরাদ্ধ ও মুজিবের আন্তরিকতার কারণে। ফলে পৌরবাসি মেয়র মুজিবকে আবারও মেয়র করতে চান।
কক্সবাজার পৌর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক উজ্জ্বল কর জানান, মেয়র মুজিব মানবিক নেতা হিসেবে পৌরবাসির মন জয় করে নিয়েছেন। মুজিবের কাছে সকল শ্রেণী-পেশার মানুষ গিয়ে কথা বলতে পারেন। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত জনসেবা করেন এমন নেতা জেলায় একমাত্র মেয়র মুজিব। দলীয় নেতা তো বটে পৌরবাসিও বারবার তাকে নগর পিতা হিসেবে দেখতে চানা।
আওয়ামীলীগের মেয়র প্রার্থী হিসেবে কাকে চান এমন একটি প্রশ্ন নিয়ে প্রতিবেদক কথা বলেছেন পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের সভাপতি আতিক উল্লাহ কোম্পানী, ২ নম্বর ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদক ওসমান গণি টুলু, ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদক ওয়াহিদ মুরাদ সুমন, ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সভাপতি আরমানুল আজিজ, ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সভাপতি সাইফুল ইসলাম চৌধুরী, ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সভাপতি শাহ নেওয়াজ চৌধুরী, ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সভাপতি জাফর আলম, ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদক আমির উদ্দিন, ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সভাপতি জহিরুল কাদের ভ‚ট্টো, ১০ নম্বর ওয়ার্ডের সভাপদি নুর মোহাম্মদ, ১১ নম্বর ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদক আবদুল মজিদ সুমন, ১২ নম্বর ওয়ার্ডের সভাপতি শাহেদ আলী সহ অনেক নেতা-কর্মীর সাথে।
আওয়ামীলীগের এসব নেতা-কর্মীদের মেয়র প্রার্থী হিসেবে শেষ ভরসা বর্তমান মেয়র ও জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমানের উপর। তারা বলেছেন, দলের নেতা-কর্মী বা সাধারণ মানুষের বিশ্বাসের ঠিকানা হয়ে উঠেছেন তিনি। আবারও মেয়র পদে তিনি নির্বাচন করুক এটা সকলে চান। তারা মনে করেন, মুজিব আবারও নির্বাচিত হবেন।
কক্সবাজার পৌরসভার নির্বাচন নিয়ে আপাততে কোন আগ্রহ দেখাচ্ছে না বিএনপি। বিএনপি’র এই নীরবতার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে জামায়াত নেতা ও সাবেক মেয়র সরওয়ার কামাল মাঠে তৎপর রয়েছেন।
বিএনপির কেন্দ্রিয় কমিটির মৎস্য বিষয়ক সম্পাদক ও কক্সবাজার-রামু আসনের সাবেক সংসদ সদস্য লুৎফুর রহমান কাজল জানিয়েছেন, কেন্দ্রিয়ভাবে বিএনপি নির্বাচন নিয়ে কোন আগ্রহ নেই। এক্ষেত্রে কক্সবাজার পৌরসভার নির্বাচন নিয়ে দলীয়ভাবে কোন ভাবনা তাদের মধ্যে নেই। ইতিমধ্যে দলীয় সিদ্ধান্ত না মেনে নির্বাচনে অংশ নেয়ায় দেশে কয়েকটি স্থানে বিএনপি নেতাদের বহিষ্কারও করা হয়েছে। এখানে মেয়র প্রার্থী নিয়ে আলোচনার কোন সুযোগ বিএনপির মধ্যে হচ্ছে না। কেন্দ্রিয়ভাবে সিদ্ধান্তের পরিবর্তন হলে পরে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
জামায়াত নেতা ও সাবেক মেয়র সরওয়ার কামাল বলেন, ‘কক্সবাজার পৌরবাসির ইচ্ছে মেয়র পদে নির্বাচন করি। আমি দায়িত্ব পালনকালে পৌরবাসি সেবা দিয়েছি, তারা আবারও মেয়র হিসেবে দেখতে চান। প্রার্থী হিসেবে মাঠে আছি। আমি কোন সময় দলগত প্রার্থী হয়নি। প্রতিবারই নাগরিক কমিটির পক্ষে প্রার্থী হয়েছি। সকলের সমর্থনে এবারও নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিয়েছি।’
.coxsbazartimes.com
Leave a Reply